Saturday, February 19, 2022

বাংলাদেশের সাহিত্য আর তার জবুথবু মরণ

প্রকাশনা জগত থেকে আমেরিকার রেভিনিউ বছরে ২৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ওরা বই প্রকাশ করে যতো টাকা আয় করে, সেই টাকায় প্রতিবছর কয়েকটা পদ্মা সেতু করা সম্ভব। বই পাবলিশ করে জার্মানীর ব‍্যবসা হয় ৬ বিলিয়ন ডলার—প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা! সাউথ কোরিয়া, যাদের জনসংখ‍্যা মাত্র পাঁচ কোটি, তারা শুধু বই প্রকাশ করে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব‍্যাবসা করে। এই তথ‍্যগুলো ২০১৮ সালের। (তথ‍্যের লিংক কমেন্টে) বাংলাদেশে প্রকাশনা জগতের আকার খুবই ছোট। ২০১৮ সালের বই মেলায় মাত্র ৭০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি বই কিন্তু বিক্রি হয় এই সময়টাতেই। তাহলে প্রকাশনা জগতের বাজারটা কতো বড়ো হবে? ১৮ কোটি মানুষের দেশের প্রকাশনা বাজার হয়তো ৩০০ কোটি টাকা। নাইলে পাঁচশো কোটি! অথচ পাঁচ কোটি মানুষের দেশ দ. কোরিয়ায় সেই বাজার চল্লিশ হাজার কোটি টাকার। একটা দেশ যতো ধনী হয়, তার বই প্রকাশের সংখ‍্যা ততো বাড়ে। বইয়ের সংখ‍্যা ততো বাড়ে। মানুষ ততো বই পড়ে। বিষয়টা শুধু এই নয় যে, মানুষের বই কেনার সার্মথ‍্য বাড়ে। বিষয়টা হলো মানুষের জ্ঞান আহরণে তৃষ্ণা বাড়ে। শিক্ষিত মানুষ বাড়ে। মানুষ বহু বিষয় নিয়ে পড়তে চায়। বহু বিষয় জানতে চায়। মানুষের গড় আয়ু বাড়ে। মানুষ বই পড়ে সময় কাটায়। আনন্দ নেয়। একটা দেশ যতো ধনী হয়, সে দেশের শিক্ষার মান ততো বাড়ে। ফলে লেখকের সংখ‍্যাও বাড়ে। পাঠকের সংখ‍্যাও বাড়ে। আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় তিন-চার লক্ষ নতুন বই প্রকাশ হয়। ইংল‍্যান্ডেও লক্ষাধিক নতুন বই আসে প্রতিবছর। বাংলাদেশে কয়টা নতুন বই আসে? পাঁচ হাজার? দশ হাজার? ২০২১ সালে বই মেলায় চার হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। বই মেলার সময়ই সবচেয়ে বেশি নতুন বই আসে। আমাদের লেখক কম। নতুন বইয়ের সংখ‍্যা কম। অর্থাৎ বইয়ের জগতে বৈচিত্র‍্যতাও কম। এটা দুর্ভাগ‍্য! নতুন লেখক তৈরি হওয়া দরকার। নতুন নতুন বই প্রকাশ হওয়া দরকার। তরুণরা লিখুক। বই প্রকাশ করুক। নতুন লেখকদের নিয়ে ট্রল না করে, তাদের জাগিয়ে রাখতে হবে। নতুন লেখকদের নিয়ে তাচ্ছিল‍্য না করে তাদেরকে উৎসাহ দিতে হবে। তাদেরকে সাপোর্ট দিতে হবে। পাঠকই ঠিক করে দিবে লেখকের ভবিষ‍্যত। পাঠকই নির্ধারণ করুন লেখকের টিকে থাকা। প্রতি বছর ধর্মের বই বেশি বিক্রি হয় বলে একটা হাহাকার উঠে। সমালোচনা উঠে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রায় দশ হাজার বিশ্ববিদ‍্যালয়ের শিক্ষক আছে। তাদের কাছ থেকে প্রতি বই মেলায় পাঁচশত বইও আসে না! দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত শ্রেণি থেকে যদি বই প্রকাশ না হয়, তাহলে সেই জায়গাটা কি শ‍ূণ‍্য থাকবে? তরুণরা, লিখো যাও। অসংখ‍্য বিষয় নিয়ে লিখো। কবিতা, গল্প, উপন‍্যাস। অণুকাব‍্য, অণুপ্রবন্ধ, অণুগল্প। শিক্ষা, সমাজ, ধর্ম। রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন, ইতিহাস, সাইন্সফিকশন, দর্শন। বিজ্ঞান, যৌনতা, প্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান। রম‍্য, রান্না, চিকিৎসা, প্রাণীজগৎ। উদ্ভিদ জগৎ, পরিবেশ, সমুদ্র। সব বিষয় নিয়ে লিখো। কাঁচা হাতে লিখো। লিখতে লিখতে পাকা হও। পড়ো, পড়ো এবং পড়ো—তারপর কলম হাতে নিয়ে লিখতে থাকো। একটা দেশ বাঁচাতে হলে বই চাই। ভাষা বাঁচাতে বই চাই। একটা জাতিকে জাগাতে বই চাই। বইয়ের স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে, একটা জাতি জাগে ও বাঁচে। ………………….. Rauful Alam ( সংগৃহীত)

Thursday, January 27, 2022

দেশ ভাগের ভাগাভাগি

১৯৪৭-এর বাংলা ভাগ : বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার প্রাক্কালে ভাগ করা হয় ভারতবর্ষের অন্যতম দুটি প্রদেশ বাংলা ও পাঞ্জাবকে। বাংলা ভাগ হয়ে একাংশ হয় পূর্ব বাংলা, আরেক অংশ হয় পশ্চিম বাংলা। বাংলায় সে সময় সর্বমোট ২৮টি জেলা ছিল (আসামের সিলেটসহ ধরলে ২৯টি জেলা)। যার মধ্যে ১৭টি জেলা ছিল মুসলিম অধ্যুষিত এবং বাকি ১২টি জেলা হিন্দু এবং বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ। ★ মুসলিম অধ্যুষিত জেলা : দিনাজপুর, রংপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, নদিয়া, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, বাকেরগঞ্জ (বরিশাল), নোয়াখালি, ত্রিপুরা (কুমিল্লা), চট্টগ্রাম, সিলেট [আসাম]। ★ হিন্দু অধ্যুষিত জেলা : কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, বীরভূম, চব্বিশ পরগণা, বাঁকুড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, খুলনা। ★ বৌদ্ধ অধ্যুষিত জেলা : পার্বত্য চট্টগ্রাম। কিন্তু চূড়ান্ত ভাগের সময় মুসলিম অধ্যুষিত বেশ কিছু জেলা বাংলাদেশকে (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) না দিয়ে দেয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ ও আসামকে। অপরদিকে হিন্দু ও বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু জেলাও পশ্চিমবঙ্গের ভাগে না এসে অন্তর্ভুক্ত হয় পূর্ব বাংলার (বাংলাদেশ) সাথে। চূড়ান্ত ভাগ : ★ তৎকালীন পূর্ব বাংলা : পূর্ব দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, সিলেট (বরাক উপত্যকা ছাড়া), পূর্ব নদিয়া (কুষ্টিয়া + মেহেরপুর + চুয়াডাঙ্গা জেলা), ঢাকা, যশোর (বনগাঁও এবং গাইঘাটা থানা ব্যতীত), ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ, নোয়াখালি, ত্রিপুরা (কুমিল্লা), চট্টগ্রাম, খুলনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম। ★ পশ্চিম বঙ্গ : কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম দিনাজপুর, পশ্চিম নদিয়া (কৃষ্ণনগর + রানাঘাট), দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, যশোর জেলার বনগাঁও এবং গাইঘাটা মহকুমা। এছাড়াও সিলেট জেলার করিমগঞ্জ মহকুমা আসাম রাজ্যের সাথে যুক্ত হয়। চূড়ান্ত ভাগে দেখা যাচ্ছে, ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়ার কথা থাকলেও পুরোপুরি ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়নি বাংলা! কিন্তু কিন্তু কী কারণে এমন নাটকীয় পরিবর্তন হয়, পিছনের ঘটনাগুলো একবার দেখে নেয়া যাক। * মুসলিম প্রধান নিম্নলিখিত জেলাগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের (পূর্ব বাংলা) অন্তর্ভুক্ত হলেও ১৭ আগস্ট রাতে এই জেলাগুলোকে পশ্চিম বাংলার কাছে হস্তান্তর করা হয়। জেলাগুলো হলো : i) মুর্শিদাবাদ ; ii) মালদহ iii) নদীয়া (পশ্চিম অংশ) iv) দিনাজপুর (পশ্চিম অংশ) v) যশোর (বনগাঁও এবং গাইঘাটা) মূল লিখাঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ | Aug 14, 2021, অন্য দিগন্ত ।